পুং-তান্ত্রিকের নারীবাদচর্চা ও মানবীবিদ্যার আদ্যছেরাদ্দ

জনৈক বং-পুং-গবের লিঙ্গসাম্য চিন্তা আর Gender Studies-এর তুমুল কাজিয়া

Posted on 30th October, 2024 (GMT 17:55 hrs)

Updated on 4th November, 2024 (GMT 07: 44 hrs)

দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ⤡

আখর বন্দ্যোপাধ্যায়⤡

ওপরের আঁকাটি ফ্রিডা কাহলোর…

১।।

আমার ভীষণই অস্বত্তি হচ্ছে: “নারীবাদ” পরিভাষাটি নিয়ে যত্রতত্র আন্দাগুন্দা কথা বলা হচ্ছে–এমনকী বাবাতান্ত্রিক রাষ্ট্রকেও “নারীবাদী” বলে কেউ কেউ দাগাচ্ছেন। তাই কয়েকটা কথা কই। 

এক।। ক) “নারীবাদ” বা মানবীচর্চার চারপাঁচটা জ্ঞানতাত্ত্বিক লহর আছে।1 সেই তরঙ্গগুলো অনুধ্যান করে তবেই তো এই মতাদর্শের সঙ্গে (যদি ইচ্ছে হয় আদৌ) পাঙ্গা নিতে পারবো তো নাকি? 

এক।। খ) দ: পূ: এশিয়ার দর্শনের একটা দস্তুর আছে: পূর্বপক্ষ রীতিমতোন খণ্ডন না করে নিজ/উত্তরপক্ষ উপস্থাপন করা যায় না। আদালতে বাদী-বিবাদী কাজিয়ার মতো ব্যাপার আরকি! অথবা তার থেকেও বড়ো একটা ব্যাপার।

তাই প্রথমেই সবিনয়ে অনুরোধ করবো এলএলবি-ডিগ্রিধারীদের, যাঁরা তাঁদের পাঠক্রমেই Legal Philosophy of Justice পড়ে এসেছেন, Jurisprudence – এর মানে জেনে এসেছেন (International law যার vanishing point), তাঁরা, নারীবাদ খণ্ডনের প্রবলতম সশ্রদ্ধ (সৎ-) ইচ্ছায় এই দার্শনিক বীক্ষাকে বুঝেশুনে খণ্ডন-মন্তব্য করে উত্তরপক্ষ পেশ করবেন। এই জেতা-হারাহীন নৈয়ায়িক বাদে আমিও স্বস্তি পাবো, কেননা ন্যায় (justice) ও ন্যায়দর্শন (logic) উভয়ত সমৃদ্ধ হবে। 

তবে প্রথমেই মনে রাখতে হবে সাংস্কৃতিক ভাবে নির্মিত সাংলিঙ্গ (gender) আর জৈবিক লিঙ্গের (biological sex) তফাৎ (Clue: সাতের দশকে ইন্দিরা গান্ধী সম্পর্কে কওয়া হত, সংসদে তিনিই একমাত্র পুং!)। নইলে কথা চালানো মুশকিল হয়ে যাবে। একএকটা শব্দ তো ইতিহাস বহন করে, তাই এই গৌরচন্দ্রিকা করে নিলুম। 

দুই।। প্রথমেই বুঝে নিতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটব্যাংকের খাতিরে আমাদের সব্বার ট্যাক্সোর পয়হায় ঋণগ্রস্ত pre-debt-or নরখাদক ক্রোনি সরকারি বা দলীয় প্রয়াসে নারীর তুষ্টিকরণ (appeasement) করা হয়। তার সঙ্গে নারীবাদ তথা মানবীবাদকে মেলানো যাবে না। নারীদের ভাতা বা ডোল দিয়ে দলগুলো হয় তো বা  জিততে পারে, কিন্তু সেটা কিছুতেই নারীবাদ নয়। দানখয়রাতির ডোল ইকনমিকে নারীবাদী রাষ্ট্র কওয়া হাস্যকর–বরং অভিসন্ধিমূলক পক্ষপাতিত্ব বলা যেতে পারে।

কেননা,

(ক) ডোল ব্যবস্থা ক্ষণস্থায়ী ও উদ্বায়ী; ভোটের রাজনীতি আর নারীবাদের চারপাঁচটা তরঙ্গের তফাৎ ধৈর্যস্থৈর্য নিয়ে বুঝতে হবে তো! Speed Capitalism-এর সময়ে চ্যালেঞ্জটা এই: non-disposable text-এর slow-motion reading! 

(খ) এই পোড়া দেশে, যে রাষ্ট্রে গুজরাট দাঙ্গার ধর্ষকেরা সমাল্য-লাড্ডু পায়; আসারাম বাপু, রামরহিমরা প্যারোলে পেয়ে দিব্য মুক্তবিহঙ্গসম ঘুরে বেড়ায়, ব্রিজভূষণ (বিচার নেই) প্রোজ্জ্বল রেভান্না (“নারীবাদী” সরকারের দেওয়া diplomatic passport- এর দৌলতে সে এখন জার্মানিতে আরাম করছে); Snoopgate কেলেঙ্কারির কারিগর সব মামলা এড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্তিরি হন, আদিত্য যোগী খ্যামতায় এসে তাঁর আর তাঁর দলের লোকেদের বিরুদ্ধে সব মামলাগুলো হাপিস করে দেয়, বিলকিস বানোর ২২ বছর অপেক্ষা শেষ হয় না এখনো, পুং মমতাময়ী আর জি কর কাণ্ডের ব্যাপারটা চাদ্দিক থেকে ধামাচাপা দিতে রাষ্ট্রযন্তরকে কাজে লাগান…

আরো, আরো ………. মাইল মাইল  নির্যাতনকল্যাণ হয়ে পড়ে আছে। 

এসব নচ্ছাড়দের যে রাষ্ট্র যারপরনাই তোল্লাই দেয়, সেই রাষ্ট্রের সরকার বা যেকোনো দল নারীবাদী হয় কী করে? নারীদের ভাতা বা ডোল দিয়ে এই দলগুলো  জিততে পারে, কিন্তু সেটা কিছুতেই নারীবাদ নয়, পক্ষপাত, কেননা আজকের মানবীবাদ লিঙ্গসাম্যের কথাই কয়। যে সরকার স্বেচ্ছাকৃত ঋণখেলাপীদের বিপুল টাকা ছাড়ান দিয়ে উড়ানে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়, সেই সবকজন ঋণখেলাপী পুরুষ। এই সরকারকে “নারীবাদী” কিভাবে বলা যায়?

২।।

এখানে এসেই দেখতে হবে ভারতে প্রতি  হাজার জনসংখ্যায় নারী-পুরুষের অনুপাতে (Sex Ratio) বিরাট তফাৎ! 

National Family Health Survey-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৪ সালে প্রতি হাজার পুরুষ পিছু নারীর সংখ্যা ৮৮৭ থেকে ৯১৪-র মধ্যে ঘোরাঘুরি করছিলো। ২০১৬ নাগাদ নারীর আনুপাতিক সংখ্যা  দেখা যাচ্ছে ৯৯১। 

অথচ, ওই একই সংস্থার হিসেবে বিরাট উল্লম্ফন দেখা গেল ২০২৩-এ: ১০০০ পুং পিছু ১০২০ নারী! কিমাশ্চর্যম্। ২০২১-এ ইভ-আদমসশুমারি হল না, অথচ এমন রিপোর্ট বেরিয়ে গেলো? 

সংখ্যাতত্ত্বের রাজপ্রাসাদে (বিশ্বে যার র‍্যাঙ্ক ১৭০০ মতোন বা আরো নিচে। লজ্জাজনক অবস্থা) থাকার দরুন আমি মার্ক টোয়েনের জনপ্রিয় করা কথাটা মানি: পৃথিবীতে তিনটে মিথ্যে আছে: Lie, Damn Lie এবং Statistics! এখন তো আবার বিশ্বগুরু King Liar⤡-এর জমানা–সংখ্যাতত্ত্বের সোনায় সোহাগা। 

সাহেবরা ভারতীয়দের বিরুদ্ধে সংখ্যা-তথ্য নিয়ে যে চারটে অভিযোগ আজকাল করেন, তা’ হল গিয়ে এই রকম: data paucity, data denial, data opacity আর অবশ্যই data manipulation! এগুলো আমার চাক্ষুষ করা হয়ে গেছে (দার্শনিক জন লক অনুপ্রাণিত এভিডেন্স এ্যাক্টো ১৮৭২ অনুযায়ী খাপে খাপ), তাই ৫২ ছুইছুই ৫১ বছর বয়সেই (২০১৮, কেন্দ্রীয় স্বশাসিত সংস্থায় তখন হিঁদুয়ানি সবে ঢুকতে শুরু করেছে) চম্পট দিই এমন ঠাঁই থেকে। 

৩।।

আরো কথা বলার আছে, পরিপ্রশ্ন আছে: 

আচ্ছা, এই মুহূর্তে ভারতীয় নারীরা সবচেয়ে বেশি অপুষ্টিতে ভোগে কেন? 

কয়েক দশক আগে অমর্ত্য সেন আর জাঁ দ্রেজ এ নিয়ে কাজ করেছেন। অশোক মিত্তির মশাই অমোঘ একটা কথা কয়েছিলেন: যে দেশের মেয়েদের ১৮-১৯ বছর বয়সেই স্তন ঝুলে মাই হয়ে যায়, সে দেশে পুংবাদী হবার কথাই ওঠে না। 

ব্যক্তিগত জায়গার কথা নারীবাদী লিখনশৈলীতে যখন কয়েই ফেল্লুম, তখন আমার একটা অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া জরুরি। 

নারীভ্রূণ হত্যার হিড়িক দেখেছি আমি গোবলয়ে। চিনা সস্তার মাল ইউএসজি মেশিন নিয়ে মারুতিগাড়িতে বেড়িয়ে পড়ে ছুটকো হাতূড়ে ডাক্তাররা–তাগিদটা নারীর শরীরকে বিক্ষত করে নারীভ্রুণ চিহ্নিত করে হত্যা করা। এই নিয়েই তৈরি হয় অসাধারণ হিংস্র ফিলিম: মাত্রুভূমি। 

তিন।। দ্বিকোটিক (binary) ভূমিকা-বদলের লীলেখেলায় নামলে বুর্জোয়া-প্রলেতারিয়েত আর স্ত্রী-পুং একই রকমভাবে ভালগার তথা সমস্যাজনক হয়ে উঠবে:  ভালগার মার্ক্সবাদ আর ভালগার নারীবাদ একই সঙ্গে জনপরিসরে জনপ্রিয় হবে। নির্মম নির্মননে অপঠিত থেকে যাবেন মার্ক্সিজম আর মানবীচর্চার মননশীল নায়ক-নায়িকারা। সাবিত্রীবাই ফুলে, ইলিনর মার্ক্স, বেগম রোকেয়া, সিমোঁ দ্য বোভেয়া থেকে শুরু করে জুলিয়া ক্রিস্তেভা, মারিয়া মাইলস, ক্যারেন ওয়ারেন, ভ্যাল প্লামউড, জুডিথ বাটলার, ডোনা হারাওয়ে, গায়ত্রী… রা জনসংস্কৃতির মাঝে ফুস করে উবে যাবেন। 

তাই আমি কোনো দ্বিকোটিক (বাইনারি) বিপরীতার্থক সম্পক্কোর কোনো একটিকে আপেক্ষিক গুরুত্ব (relative importance) দিতে নারাজ! এবং আমি একই সঙ্গে  লিঙ্গনিরপেক্ষ আইনের পক্ষে। তার আগে বুঝে নিতে চাই নিরপেক্ষতা বলে আদৌ কিছু হয় কিনা! এই ধরো, unconditional love কথাটার সাপেক্ষে যদি আমি কই, unconditional hatred-এর কথা, তাহলে তুমি কী জবাব দেবে? তাছাড়া এই আইন লাগু করবার “টাইমিং” নিয়েও সঙ্গত প্রশ্ন ও যুক্তি আছে– তা নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে বরং মানবীবাদী চিত্রপরিচালক Cassie Jaye নির্মিত একটি চলচ্ছবি দেখে নেওয়া যাকঃ

ভারতে দীপিকা ভরদ্বাজ এইধরণের ফিলিম করেছেন চরম পুংতান্ত্রিক বিজেপি সমর্থক হিসেবে। গোটা বিষয়টাই তাই ঘেঁটে ঘ।

ব্যাপারটা খোলসা করে কই, নারী-পুং দ্ব্যণুক বা বাইনারিতে এখন LGBTQIA +৭০ এর দৌলতে খেলা মুশকিল, বিশেষত লিঙ্গনিরপেক্ষ আইন না থাকলে। তাই, এখন উম্যান এবং ম্যাসকুলিনিটি স্টাডিজের বদলে গড়ে উঠেছে  লিঙ্গনিরপেক্ষ জেন্ডার স্টাডিজ! বিভিন্ন য়্যুনিভার্সিটিতে আমি এই বিষয়টা বেশ খাটাখাটনি করে পড়িয়েছি, বক্তিমে দিয়েছি, লিখেছি তো বটেই।

অতএব,  

১. পক্ষপাত নয়, একচোখামি নয়, দ্বিকোটিকের খেলা নয়, বরং দ্ব্যণুক ছেলে-মেয়ে এবং LGBTQIA+ বর্গে দেখতে হবে খ্যামতা-সম্পক্কো–পড়তে হবে খ্যামতার দার্শনিক মিশেল ফুকোর বয়ান। নইলে এটা ভালগার মার্ক্সবাদীদের মতোই খেলো তথা ভালগার পুংবাদ হয়ে যাবে। তাই, একদিকে আমি যেমন স্থুল misandry- কে সমর্থন করবো না, তেমনি গোদা ভালগার misogyny-কেও পাত্তা দেবো না। আবারো বলছি, বিপরীতার্থক দ্বিকোটিক (বাইনারি) কাজিয়ায় কোনো একটাকে আপেক্ষিক গুরুত্ব দেবো না অবশ্যই।

২. তেমনি আবার সেই সব তঞ্চক-তঞ্চকাদের কথা, যারা সম্ভবত মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয় পুংকে কিংবা নারীকে। #Me_too আন্দোলনে এইরকম আপ্ত বা testimony কিছু ক্ষেত্রে বেরিয়ে এসেছে। যার যাচাইকরণ মুশকিল। প্রমাতার কাছে আপ্ত যথেষ্ট হলে বিপদ আছে। 

কিন্তু এখানেই মনে পড়ে যায় LoSHA-র কথা, যখন ২০১৭ সালে রায়া সরকারের মাধ্যমে আমাদের সামনে হাজির হয় একগাদা নাম, যার মাধ্যমে প্রমুখিত হয় academiocracy-র পুংদের প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ষণ, নির্যাতন মানসিকতা। এই লিস্টি প্রকাশ হওয়ার পরেই রায়ার কাছে আসতে শুরু করে খতম করে দেওয়ার হুমকি।

যে দেশে দৈনিক ৮৪ থেকে ৯০টি reported মেয়ে ধর্ষ*ণের খবর আসে (তার ৫৫% আদালতে “মিথ্যে” প্রমাণিত হলেও এবং পুং পুলিশ অনেক সময়েই এফ-আই-আর নিতে নারাজ হওয়ার ফলে), সে দেশে নিরাপত্তার সামগ্রিক অভাবের কথাই পাড়তে হবে। আমরা যারা surveillance society বা নজরদারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, তারাও তখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে সিসিটিভির panopticon-কে যেচে ডেকে আনি।

৪।।

জনৈক লিঙ্গ-নিরপেক্ষ আইনের সমর্থকের (আদতে পুংবাদী) সঙ্গে বোঝাপড়া: 

[শ্রদ্ধেয় পাঠক, পুনরাবৃত্তিদোষ ক্ষমা করবেন]

পুং: ওরে বাবা, এত্তো বড়ো লেখা। তার ওপর তত্ত্বকথা। ওসব তত্ত্বকথা মানুষ বোঝে না। মানুষ চায় লিঙ্গ ও ধর্ম নিরপেক্ষ আইন। স্বয়ং কমরেড লেনিন এই কথা কয়েছিলেন সোভিয়েত রুশিয়ায়। তাই একদিকে তৃণমূল বিজেপির বিরোধিতা করবো, আর অন্য দিকে নারীবাদী রাষ্ট্র আর আইন ও নেড়ীবাদী সরকারী নীতির সমর্থক হবো। এটা বামপন্থীদের মারাত্মক দ্বিচারিতা। ঐ জন্যই বামপন্থীরা ভারতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে। 

[খ্যাকখ্যাক করে (এই দুঃশাসনের অ-সময়েও) হাসতে ইচ্ছে হল, “নারীবাদী রাষ্ট্র আর আইন ও নেড়ীবাদী সরকারী নীতি” কথাগুলো শুনে। ওনেক কষ্টে হাসি চেপে ভাবলুম, একটা খোরাক তো পাওয়া গেছে, একটু ভেজা ফ্রাই হয়ে যাক বরং!]

আমি: “মনবসনের ময়লা ধুতে তত্ত্বকথা সাবান। (কিন্তু, সাবান মেলে না।)” “মানুষ” না বুঝলে (কোনো সার্ভে আছে কি, যাতে “মানুষ চায়”-এর  লিস্টিতে এই দুটি অ্যাজেন্ডা আছে?) বোঝাতে হবে তো বটেই, তা’ বলে আজ অব্দি নারীবাদী বৈভবের নানাত্বকে ফেলনা বলা যাবে না। আবার ফের, পুনরায় নজরটানের খাতিরে কইছি, একদিকে আমি যেমন স্থুল misandry- কে সমর্থন করবো না,  তেমনি গোদা ভালগার  misogyny- কেও পাত্তা দেবো না। বিপরীতার্থক দ্বিকোটিক (বাইনারি) কাজিয়ায় কোনো একটাকে আপেক্ষিক গুরুত্ব দেবো না অবশ্যই। আর লেনিনের কথা বলছো? আচ্ছা, কোল্লোন্তাইয়ের সঙ্গে লেনিনের কথোপকথন, কাজকম্ম নিয়ে তোমার কি আদৌ কোনো বক্তব্য আছে? সোভিয়েত পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা বিভাগ নিয়ে কি মনে হয় তোমার?

আরো কই, “মানুষ চায়” একটা সার্বিক (Universal) বচন, যা দিয়ে সত্যের দাবি পেশ করা হচ্ছে (Universal Quantifier প্রয়োগ করে)। এমন সার্বিক  সত্যের দাবি সচরাচর ধর্মীয় গুরু আর রাজনৈতিক নেতারা করেন। আর আমরা, দর্শনের ছাত্তররা, কন্টিঞ্জেসি বজায় রেখে উপকল্প বা হাইপোথেসিস পেশ করি মাত্র।

পুং: সেইজন্যই অবশ্যই চাই লিঙ্গ ও ধর্ম নিরপেক্ষ আইন। যেখানে সবার সমান অধিকার। পুরুষ কর্তৃক নারী নির্যাতন নিয়ে কথা বলার জন্য ভারতে লক্ষ লক্ষ লোক আছে। মিডিয়া আছে। সরকারী দরদ আছে। কিন্ত নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলার লোক খুব কম। লড়াইটা সেখানেই। 

আমি: অবশ্যই। এ অ-সময়ে কি কথা পাড়বো বা পাড়বোনা, কোনটায় জোর দেবো বা দেবো না, তা নিয়েই আমার মাথাব্যথা। 

পুং: আবারো বলছি ধর্ম, নারীবাদী আইন ও নারীবাদী ভাতার রাজনীতি ভারতে এখন একটা অত্যন্ত ও একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়। সেই প্রশ্নে কঠোর ভাবে লিঙ্গ নিরপেক্ষ আইন ও সরকারী নীতির পক্ষে জোরালো ভাবে না দাঁড়াতে পারলে কোনো আন্দোলন করেই আর কিস্যু হবে না। শাসকরা ঐসব আন্দোলনে আর ভয় পায় না। তাই বিজেপি, তৃণমূলের বিরোধিতা করবো। অথচ একতরফা নারীবাদী আইন ও নারীবাদী ভাতার রাজনীতির সমর্থক হবো। এটা চরম ধ্যাষ্টামো ছাড়া আর কিছুই নয়।

আমি: আমি সেকথা বলিনি আদৌ। তবে তুমি কোন আন্দোলনের কথা কইছো ? “কোনো আন্দোলন করেই আর কিস্যু হবে না”!? শাসকরা ঐসব আন্দোলনে আর ভয় পায় না”? মানে কী? ধরা যাক, CAA, কৃষক, লাদাখে পরিবেশ আন্দোলন, মিলিটারি দ্বারা ধর্ষিতা মনিপুর দুহিতাদের উলঙ্গ প্রতিবাদ ইত্যাদি এসব কিছু কি?

ওপরের ছবিগুলো এঁকেছেন রাজীব চৌধুরি।।

ওহোহ: তুমি তো আবার Climate denialist! ফেবুতে দানার সময় লিখেছিলে, “২০২০ থেকে আমরা জানতাম যে কোভিডের মতোই ওয়েদার নিয়ে আতঙ্ক তৈরী করা হবে আর পরে ওয়েদার লকডাউন করতে পারে।” প্রত্যুত্তরে আমি লিখেছিলুম, “চলো, সুন্দরবনে গিয়ে বসবাস করি before being a #Climate_refugee! কিংবা ভারতের উপকূলীয় এলাকায় বাসস্থান নির্মাণ করে থেকে যাই”। 

চাবিশব্দ: Anthropogenic Glocal (global+local) heating, boiling frog syndrome, Climate emergency, Climate Denialist, Climate Sceptic…”

তুমি উত্তর দাওনি। তুমি কি জানো Ecofeminism বলে একটা ব্যাপার আছে? এরকম একটা চমৎকার জ্ঞানীয় ঘরানা তথা পৃথিবীজোড়া আন্দোলন আছে? ওয়াঙ্গারি মাথাই-এর গ্রিন বেল্ট আন্দোলন সম্পর্কে ধারণা আছে তোমার, যার মাধ্যমে উনি পেশ করেছিলেন সেই ছোট্ট হামিংবার্ডের কথা, যে জঙ্গলখেকো বিধ্বংসী আগুনকে রুখতে ঠোঁটে করে এক ফোঁটা জল নিয়ে গিয়ে ফেলছিলো সেই আগুনের মধ্যে? বড়ো বড়ো জন্তু-জানোয়ারেরা তখন হাঁ করে চেয়ে দেখছিলো এই “খুদে”র কীর্তি!

[এবার ছাত্তর পড়ানোর ঘ্যানঘ্যানে পুরোনো অভ্যেসে ফের বলে ফেলি একই কথা]

যে রাষ্ট্র গুজরাট দাঙ্গার রেপিস্টস, আসারাম বাপু, রামরহিম, ব্রিজভূষণ (বিচার নেই) প্রোজ্জ্বল রেভান্না (diplomatic passport- এর দৌলতে জার্মানিতে আছেন) প্রমুখদের যারপরনাই তোল্লাই দেয়, সেই রাষ্ট্র (নাকি দলভিত্তিক সরকার?) নারীবাদী হয় কী করে? আর রাষ্ট্র তো একটা বিমূর্ত ধারণা, যার অনেক অঙ্গ এবং বর্গ। তাই যখন তুমি “নারীবাদী” রাষ্ট্র বলো, তাহলে অনেকগুলো জিনিসকে বোঝাবেঃ সরকার, সরকারি দল, সার্বভৌমত্ব, জনসংখ্যা, রাজনৈতিক-ভৌগোলিক সীমানা।

পুং: এইসব নিয়ে আমার দ্বিমত আছে তোমার সাথে। আর তোমার দেওয়া তথ্যগুলো এখানে মানে নেড়ীবাদী রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। যাই হোক এ নিয়ে আর বিতর্কে যাবো না।

আমি: হল্ট করে গেলে? নারীবাদের অন্তত পাঁচটা লহর খণ্ডন করে তবেই তুমি “নারীবাদী রাষ্ট্র” (নাকি সরকার? দল?) হাইপোথিসিস পেশ করতে পারবে। নইলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে না। তুমি পাশাপাশি এই কথাগুলো না বললে একবগগা, একপাক্ষিক একচোখামি হয়ে যাবে (আবার সেই বাইনারি নিয়ে আপেক্ষিক গুরুত্ব প্রদানের লীলেখেলা–)।  ক্রমান্বয়ে যে কোনো বক্তব্যের প্রত্যুত্তরে ওই একই কথা বললে তোমার-আমার ওসিডি হয়ে যাবে। বাবাতান্ত্রিক দলীয় সরকারের পক্ষে আমার প্রচুর যুক্তি আছে। 

[এবার তার তথাকথিত নিরপেক্ষতার মুখোশ খুলে গেলো। পুংবাদী মুখ বেরিয়ে এলো।]

পুংঃ মাইরি, তোমার পরিচিত দু-চারজন লোককে ফোন করে আসল পরিচয় জানতে পারলাম। সর্বত্র বিদ্যে জাহির করে বেড়ানো তোমার স্বভাব এবং বৈষ্ণবী বিনয়ের আড়ালে অন্য লোককে ব্যঙ্গ-উপহাস ও অপমান করা তোমার বৈশিষ্ট্য। আমার মনে হয়, তোমাকে যেরকম সোজা-সাপ্টা ভাষায় আমি জবাব দিয়েছি, সেটা দেখে অনেকেই খুশি হবে। তবে কি এই সমাজে ক্ষমতার নানান বিন্যাস আছে, একটা পিএইচডি ডিগ্রী পাওয়ার জন্য লোভী মাগী ছাত্রীরা তোমার বিছানায় দিব্য শুয়ে পড়ে। আর তুমি তার সু্যোগ নাও।

আমিঃ হাঃ হাঃ আহা! একদম ঠিক বলেছো বটেক। অসাধারণ জবাব দিয়েছো। “ক্ষমতার নানান বিন্যাস” কথাটা আমাকে ফুকোর কথাই মনে করিয়ে দিলো: polymorphous খ্যামতা-সম্পোক্কো। এখানেই “ক্ষমতায়ন” (empowerment) কথাটাকেও সমস্যায়িত করা প্রয়োজন। তা বেশ, তা বেশ, একবগগা টক্সিক পুংবাদ থেকে বেরিয়ে এলে তাহলে? Good boy! Very good, very good!

এখেনে আমার তিনখান কতা কইবার আসেঃ

১)  একি কথা শুনি! তোমরা তো মনে করেন পুং কোনো অপরাধই করতে পারেনা–। অতএব, সুযোগ-সন্ধানী পুং অধ্যাপক এমন কাজ করেছে বলাতে তুমি আত্মখণ্ডনই করে ফেললে। এতে তোমার পুংবাদী মুখ মুখোশ ছেড়ে বেরিয়ে এলো। কিন্তু খেয়াল করে দেখো, #MeToo বা LoSHA কোনোটাতেই আমার নাম নেই। আমি তো সেলিব নই।

২) আমি বই-snob বটেক। “ত্রিরত্ন” কবিতাটি স্মরণ করিঃ

৩) আচ্ছা, তোমরা কোনো তাত্ত্বিক এবং তাথ্যিক আলোচনা চলাকালীন ব্যক্তি-আক্রমণে মাতো কেন? এতো এথনোসেন্ট্রিজম কেন? বাগ্-যুদ্ধে হেরে যাওয়ার দরুনই কি?

পুং: আমার মতো হাই কোর্টের দুঁদে উকিলের সঙ্গে তুমি তক্কো করছো কোন সাহসে? তুমি কে হে বাপু? তুমি জানো– সম্প্রতি অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী তার ক্লাসের সমস্ত পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে সঙ্গম করে এখন গর্ভবতী হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে। একে কি বলবে? এ তো এখন বারো ভাতারি বেশ্যা হয়েছে। সন্তানের বাপের নাম খুব সম্ভবত জানে না। এর নামই নারীবাদ। আর ওদিকে যে মহিলারা খোরপোশ চায় তাদের শোভা বাজারের ঠিকানা দেওয়া উচিৎ, টাকা নয়।

আমিঃ এসব কী কইছো তুমি? বাবাতান্ত্রিক হয়ে পরাক্রান্ত পিতৃনামের খোঁজ করছো? আর কাকেই বা বলছো “নারীবাদ”⁉

তুমি কি কেলাস টেনে রবি ঠাকুরের “ব্রাহ্মণ” কবিতাটা পড়োনি? সেই যে সেই কিশোর সত্যকাম গিয়েছিলেন মহর্ষি গৌতমের কাছে ব্রহ্মবিদ্যা শিখতে। গৌতম তাঁর গোত্র জানতে চান। সত্যকাম তো সেটা জানেন না। মাকে জিজ্ঞেস করলেন। মা কইলেন,

“যৌবনে দারিদ্র দুখে

বহুপরিচর্যা করি পেয়েছিনু তোরে,

জন্মেছিস ভর্তৃহীনা জবালার ক্রোড়ে,

গোত্র তব নাহি জানি তাত।’

সত্যকাম পরের দিন ফের গৌতমের কাছে এসে মা জবালার কথাই পুনরাবৃত্ত করলেন। ছাত্রদের মধ্যে কেচ্ছাগন্ধী গুঞ্জন উঠলো। কিন্তু,

“…উঠিলা গৌতম ঋষি ছাড়িয়া আসন,

বাহু মেলি বালকেরে করিয়া আলিঙ্গন

কহিলেন, “অব্রাহ্মণ নহ তুমি তাত।

তুমি দ্বিজোত্তম, তুমি সত্যকুলজাত।’

এই হল গিয়ে জাবাল সত্যকাম কাহিনি। ছান্দ্যোগ্য-উপনিষদে পাবে।

মনে রেখো, “বিশ” (বৈদিকযুগের clan বা গ্রাম-সমবায়)- এর সেবা যিনি করেন, তাঁকেই বেশ্যা বলা হতো আর জনপদের কল্যাণ যে নারী করেন, তিনি “জনপদকল্যাণী”  (মিসোজেনিস্ট বাচনে, “খানকি”!)  এনারা যদি না থাকতেন, জনপদের কল্যাণ না করতেন, তাহলে ধর্ষণের হিড়িক লেগে যেতো।

আমি সেই সমাজকে ঘেন্না করি, যে সমাজের অভিধানে “অবৈধ সন্তান” পদবন্ধ আছে।

দেখো বন্ধু, আমি যেমন অপর/অন্যকে জানতে অ-জানতে নির্যাতন করেছি, তেমনি এই অপরও আমাকে ঝাড় দিয়েছে এই হিংস্র সমাজে। তাই বোঝাপড়ার তাগিদে ফের বলতেই হচ্ছেঃ

“অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি

এলে সুখের বন্দরেতে,

জলের তলে পাহাড় ছিল

লাগল বুকের অন্দরেতে,

মুহূর্তেকে পাঁজরগুলো

উঠল কেঁপে আর্তরবে–

তাই নিয়ে কি সবার সঙ্গে

ঝগড়া করে মরতে হবে?”

সংলাপ থেমে যায়। পুং যাজ্ঞবল্ক্য গার্গীকে ধমক দিয়ে বলেনঃ অতিপ্রশ্ন করো না গার্গী, তোমার মুণ্ড খসে যাবে।

আমি আর কী করি, নির্যাতিত জৈব পুং হিসেবে Victim Card খেলার তাগিদে পড়তে বসি নীরদবাবুর বাঙালী জীবনে রমণী, বিভূতিবাবুর দেবযান, পরশুরামের ভূশণ্ডীর মাঠে, জীবনানন্দের মাল্যবান, রবিবাবুর মণিহারা…।

এরপর আমি দেখতে বসি দীপা মেহতার “ওয়াটার” ফিলিমটি… ঘুমিয়ে পড়ি। স্বপ্নে দেখি, বজরং দল, আর-এস-এস-বিজেমূলের স্বয়ংসেবকেরা আমাকে কাটতে আসছে…

ডরাইছিলা হ? আরে পুরুষ !? ⤡

আরো দেখুনঃ

SEX AND TEXT⤡

অন্তিম টীকাঃ

  1. প্রথম লহরঃ ১৯ শতকের শেষভাগে, মেয়েদের সমান আইনী অধিকার নিয়ে কথা শুরু হলো। তৈরি হলো “উদারবাদী মানবীবাদ” (Liberal Feminism)।
    দ্বিতীয় লহরঃ ১৯৬০-৭০-এর মধ্যে ঘোষনা করা হলো প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবস্থাগত দমন-পিড়নের বিরুদ্ধে নারীদের জেহাদ। সমালোচনা করা শুরু হলো তথাকথিত “চিরকালীন” সাংলিঙ্গের বর্গীকরণগুলোকে। প্রাথমিক স্তরে যুক্ত হলো না-দ্বণ্যুক লিঙ্গ অবস্থান (queer approach) এক প্রতিস্পর্ধী সাংস্কৃতিক পরিসরের কথা পেশ করে, যেখানে কথা হলো সামাজিক-ক্ষমতা কাঠামোর আমূল উৎপাটন এবং পরিবর্তনের। এই সূত্র ধরেই উদারবাদী মানবীবাদের পাশাপাশি জন্ম নিলো র‍্যাডিকাল মানবীবাদ (radical feminism) এবং সাংস্কৃতিক মানবীবাদ (cultural feminism)।
    তৃতীয় লহরঃ ১৯৯০ থেকে ২০১০ অব্দি তথাকথিত মূলস্রোতের ধারণার “নারীত্ব”কে উদ্দেশ্য ছুঁড়ে দেওয়া হলো এক জবরদস্ত চ্যালেঞ্জ। কথা এলো “intersectionality” বিষয়ে, যেখানে এসে মিলে গেলো শ্রেণী প্রশ্ন, লিঙ্গ প্রশ্ন, জাত-পাতের প্রশ্ন, বর্ণের প্রশ্ন ইত্যাদি।
    চতুর্থ লহরঃ ২০১০ পরবর্তী অধ্যায়ে আন্তর্জালের বিভিন্ন ‘টুল”-এর ব্যাপক ও সামগ্রিক প্রয়োগের হাত ধরে মানবীবাদী আন্দোলন এক নয়া আঙ্গিকে প্রকাশ করলো নিজেকে। “স্বাধীনতা”, “বিচার”, “ক্ষমতায়ন” শব্দগুলোকে প্রশ্নের মুখে ফেলা হলো। আরো পোক্ত হলো “intersectionality”-র জবানি বহুত্বের আলোচনায়।
    পঞ্চম লহরঃ অনেকে এই পঞ্চম লহরের অস্তিত্ব মানেন, অনেকে মানেন না। তবে এই লহরকে (যা নাকি ২০১৫ থেকে শুরু হয়েছিলো বলে দাবী করা হয়ে থাকে) অনেকটা এইভাবে বোঝা যেতে পারেঃ সর্ব স্তরে লৈঙ্গিক হিংস্রতার বিরুদ্ধে অবস্থান, পুঁজিতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইকে আরো শক্তিশালী করে তোলা, এবং সম্পূর্ণ পরিবর্তনের তাগিদে গণ আন্দোলনের ডাক। এখানে না-দ্বণ্যুক লিঙ্গ অবস্থান আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
    এছাড়াও ষষ্ঠ ও সপ্তম লহরের কথাও বলে থাকেন কিছু কিছু মানুষজন (যদিও এর যাথার্থ্য নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে), বিশেষত মানবী-পুঁজিতন্ত্র (Femcapitalism) ও তথাকথিত “খৃষ্টিয়” মূল্যায়নে নারী ও মানবীবাদ বিষয়ক ভাবনাগুলোকে কেন্দ্র করে। ↩︎

2 Comments

  1. কল্যাণ হোক তব, কল্যাণী।
    প্রাচীন ভারতে বিশ (একধরণে কৌম বা সমাজ ব্যবস্থা) সেব্যাকে বলা হতো “বে*শ্যা”। জনপদের কল্যাণ করতো এরাই, তাই এদের নাম: জনপদকল্যাণী। মৃচ্ছকটিকম্ নাটকে বসন্তসেনা নাম্নী জনপদকল্যাণীকেই রাজার শ্যালক শকার ধাওয়া করছে (stalk: মোদি-শার স্নুপগেট কেলেংকারির মতোন।) মাগনা সুখের তাগিদে–।
    ওহ: কেউ আবার বলে বসবেন না যেন, যৌনকর্মীর সম্মতি ছাড়াই তারা যৌনকম্মে লিপ্ত হতে পারেন: “যৌনকর্মীকে ধ র্ষ*ণ করাই যায়”। এসব কথা শুনলে হৃৎকম্প 💘 হয়–ভালোবাসার ইমোজি তীরবিদ্ধ, রক্তাক্ত।
    এই জনপদকল্যানীরাও আজ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। তাঁরা কেউ কেউ পুং-লালসাকে চরিতার্থ করার তাগিদে তাঁদের নারী-শরীরকে পণ্য হিসেবে কিনতে বলছেন। হোলির দিনের মতোই যৌ&নপল্লী প্রতিদিনের পণ্যায়িত দোল–অবদমিত eros-এর বমি করার (ventilation) ঠাঁই। তবুও মাগনায় পাওয়া নারী-শরীর ধ র্ষি ত হয়।
    খেয়াল করবেন, ভারতবর্ষের যেকোনো বিখ্যাত হিঁদু ধর্মীয় স্থানের পাশে জনপদকল্যানীদের একটা বড়ো ঠাঁই রয়েছে। কী অদ্ভুত না? ধর্ম, যৌনকর্মী কোথায় যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। বিলকিস বানো, আসিফা নির্ভয়া থেকে তিলোত্তমারা কবে পণ্যায়িত যোনিকেন্ত্রিক পুং পঞ্চমকার থেকে মুক্তি পাবেন?
    এই বাজারে আদতে শৃঙ্গার নেই। ভালোবাসা যেখানে টাকা-পয়হার লেনদেনে আবদ্ধ তখন সেখানে
    অভিধান থেকে ” প্রেম” সংলগ্ন সব প্রবিষ্টিটিগুলোই (dictionary entries) উড়ে যায়।
    কিন্তু, তবুও আশায় বাঁচে চাষা–
    “ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড কর প্রেমের পদ্যটাই
    বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি শুধু তোমাকেই চাই।”
    (এই পংক্তিদ্বয়ের কবিরে পাবে না তার জীবনচরিতে। author -এর author-ty তথা authoritarianism- এর ইন্তেকাল ঘটেছে। আজ ধ র্ষ ক হিঁদুবাদীরাই খ্যামতার লোভে নকলি আন্দোলনে ব্যারিকেড ভাঙে। তারা ভুলে যায় যে তাদের মধ্যেই ব্রিজভূষণ, প্রোজ্জ্বল রেভান্নারা রয়েছে। ভারতে দৈনিক ৮৪-৮৬ টা ধ*র্ষ*ণ হয়। এ বড়ো সুখের সময় নয়।)
    এই রাত জাগার আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন সহ বলছি, কয়েকটা প্রশ্ন করছি:
    ১. কেন ধ র্ষ ন?
    ২. জিগুলুদের অবস্থা কী? (Gigolo App আছে)
    ৩. Male R* p*e হয় কি?
    এইসব ভাবতে ভাবতেই শুনতে পাই, এক ফেরিউলির হাঁক:
    “ভালোবাসা কিনবে গো, ভালোবাসা। টাটকা, তাজা ভালোবাসা⁉️”

    Liked by 2 people

Leave a Comment