প্রাক্তন বাউনের Woke তথা সদাই Politically Correct হওয়ার ক্রমবর্ধমান অসুবিধে: এক পৈতেছেঁড়া বাউনের ক্লেদ, গ্লানি, অপরাধবোধ

Posted on 15th March, 2025 (GMT 16:18 hrs)

Updated on 16th March, 2025 (GMT 06:29 hrs)

দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ⤡

বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ আখর বন্দ্যোপাধ্যায়⤡

এই লেখাটি বনে উঠেছে সাম্প্রতিক সাহিত্য অকাদেমির বাংলা বিভাগে সদস্যদের মধ্যে এক বিশেষ সদস্যের পদত্যাগ নিয়ে। সেই শিরদাঁড়াযুক্ত মানুষটিকে কুর্নিশ জানাই। আরো সমস্যা পেকেছে সাহিত্য অকাদেমির বাংলা বিভাগের মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত কল্যাণী ঠাকুর চাঁড়াল মানুষটিকে নিয়ে। এনাকে এবং আরো তিনজন সদস্যকে যারা চেনেন না বলছেন এবং তদুপরি এই দশ সদস্যদের এক বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁদের তুলোধোনা করা হচ্ছে। আরো সমস্যা আছে।  যে বইটির সম্ভাব্য পুরস্কারপ্রাপ্তি নিয়ে বিতর্ক বেঁধেছে, কুজনে বলছে সেটি নাকি এক “হাই প্রোফাইল” রাজনৈতিক ব্যক্তির দ্বারা লিখিত। এর বেশি কিছু আমি জানি না।

“বহস করিতে গিয়া বায়াত হইনু, তোমা বিনে গতি নাই লালন সাঁই গুরু।”

দুদ্দু শাহ

কিন্তু…হঠাৎ দেখিঃ

[আহা, কী বক্তিমে শুনিলুম মৌলবাদী , হিংস্র সরসংঘচালকের মুখ হইতে!]


১. “আমি”-পরিচয়: মহাস্থবির জাতক [নাম স্থবির (Constant), রূপের বদল ক্ষণে ক্ষণে (Variable এবং Praxis)]

কোনো এক কাকতালে, কোনো এক চান্সে/অ্যাক্সিডেন্টে অসংখ্য শুক্রাণু-ডিম্বাণুর লড়াই-লটারিতে “আমি” নামক জনৈকের জম্মো। সেই “আমি” একটা টিকিট-চিহ্ন পেয়েছে: দেবু বাঁড়ুজ্জে: কোলকাতার বাঁড়ুজ্জে (কৃতজ্ঞতা: নাজিম হিকমত এবং কবি সুভাষ মুখুজ্জে)। 

২. পৈতেছেঁড়া বাউন বটেক!

এই বাঁড়ুজ্জে পদবিটা যে এতো বোঝা হয়ে দাঁড়াবে, তা’ আগে বুঝিনি। আদালতে এপিঠওপিঠ (affidavit-ইঞ্জিরি জানি না তো, তাই এমন বানাম লিখে ফেলেছি) করার সময়ও পাইনি চিরকালের ল্যাদখোর আমি। রণদীপ আর ধরিত্রীপুত্রদের এক্ষেত্রে কুর্নিশ জানাই। বামনাই কাণ্ড নিয়ে আংলা-বাংলায় অতি অল্প হইলেও সামান্য কিছু নেতিবাচক লেখা লিখেছি বটেক।

৩. কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের ওপর করা থিসিস

এক দৃপ্ত মতুয়ার করা মোটকা দু-খণ্ডের সন্দর্ভের সুপাইভাইজার ছিলেন প্রয়াত অধ্যাপক তুষার চাটুজ্জে মশাই। তা’ তিনি সেই ছাত্তরের দ্বারা স্পনসরড হয়ে আন্দামান গিয়ে শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে ওই মোটকা থিসিস পড়ার সময় পান।
পিএইচডি ভাইভায় থিসিসের সবটা দেখেশুনে একটাই চিহ্নতত্ত্ব বিষয়ক প্রশ্ন করেছিলুম: “আচ্ছা, সবই তো বুঝলুম যে নমঃশূদ্ররা বর্ণ হিন্দুদের সামাজিক নিপীড়ন, বঞ্চনা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। কিন্তু এত্তো বামনাই আইকন (দামোদর কোসাম্বি যাকে বলেন ‘identificatio brahmanica’) কেন আপনাদের ধম্মে? হরিচাঁদ ঠাকুর আর তাঁর ধর্মপত্নী জগৎমাতা শান্তি দেবীর মাথার পেছনে জ্যোতি বেরোচ্ছে; তাঁরা বসে আছেন পদ্মের পাপড়ির ওপর। আর ওঁ-চিহ্ন জ্বলজ্বল করছে। এক্কারে পাক্কা হিঁদু ক্যালেন্ডার আর্ট।

এটাকি শ্রীনিবাসের সংস্কৃতায়ন প্রক্রিয়া? নাকি প্রবাল দাশগুপ্ত যাকে বলেন Formal Elaboration of Social Hierarchy? সাদা বাংলায় যারে কয় “Upward mobilization”?

এই পরিপ্রশ্নে তুষারবাবু ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলেন। তাঁদের দর্শন নিয়েও কয়েকটা প্রশ্ন করেছিলুম–বিগত শতাব্দীর নয়ের দশকের কথা, এখন গ্রে ম্যাটারে কারফিউ লাগায় আর কিছু মনে নেই। যেটুকু মনে আছে, তাই বলছি।

প্রথমত, মতুয়াদের তত্ত্ব ব্রহ্মতত্ত্বের এক বিশেষ উপ/প্রতিস্থাপন। অনেকটা বেদান্তের বৈষ্ণব ধারাগুলোর অনুবর্তি;

দ্বিতীয়ত, মতুয়াদের অগ্নিহোত্রাদিকর্ম বাউনতান্ত্রিক;

সর্বোপরি তাঁরা ঋষি কশ্যপ (ব্রহ্মা-নন্দন মরীচির পুত্র) ও তাঁর ছেলে ব্রহ্মজ্ঞ নমস্ মুনি “ব্রাহ্মণ”-বাউনের বংশোদ্ভূত।

উমাচরণ বিশ্বাসের এক বয়ান⤡ থেকে নিম্নোল্লিখিত বিষয়গুলো উঠে আসেঃ

  • নম জাতির উৎপত্তি: ঋষি কাশ্যপ পুত্র এবং ব্রাহ্মণ পিতা নমস্ মুনির সন্তানদের ঔরসে শূদ্রা মাতা(সীমন্ত নামক এক শূদ্র রাজার দুই কন্যা)-র গর্ভে। পিতৃসূত্রে তারা ব্রাহ্মণ, মাতৃসূত্রে শূদ্র।
  • বামনাই বৈশিষ্ট্য: নমজাতির মধ্যে ব্রাহ্মণ আচার ও বৈদিক রীতি প্রচলিত। শ্রাদ্ধ, বিবাহ, পূজা-পার্বণ, শৌচ-অশৌচ ইত্যাদি ব্রাহ্মণ রীতিতেই সম্পন্ন হয়। তাঁরা সামবেদ অধিকারী এবং দশদিনে অশৌচান্ত পালন করেন।
  • চণ্ডাল অপবাদ: রাজা বল্লাল সেন নমজাতিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে তাদের চণ্ডাল বলে অভিহিত করেন এবং শাস্ত্রে তাদের নাম মুছে দেন। কিন্তু নম জাতির জন্ম ও জীবিকা চণ্ডালের বিপরীত।
  • তন্ত্রগ্রন্থে উল্লেখ: শক্তিসংগম তন্ত্র গ্রন্থে নম জাতির উৎপত্তি ও তাদের ব্রাহ্মণীয় পরিচয় বর্ণিত হয়েছে। ফরিদপুরের পণ্ডিত শ্যামাচরণ তর্কালংকার এই গ্রন্থ অনুবাদ করেন।

এর থেকে সাফ বোঝা যায় যে গোটা ব্যাপারটা ঘেঁটে ঘ। এই Genealogy-তে origin খোঁজার আধিবিদ্যক খপ্পরে পড়ে তথাকথিত “চাঁড়াল” বাউনতান্ত্রিক হয়ে উঠছে। এটাই জাতে ওঠার খেলা (Sagina Mahato Syndrome?)। জনপরিসরে যেকোনো দ্বিকোটিক বিপরীতার্থক সম্পর্কেই এমন ভূমিকাবদলের খেলা দেখা যায়ঃ প্রলেতারিয়েৎ-এর কাছে বুর্জোয়া যাপন এবং নৈতিকতা গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। আবার নারী-পুং দ্ব্যণুকের ক্ষেত্রে নারী যেন হয়ে উঠতে চান পুংসম, বাবাতান্ত্রিক। কালো মানুষ ‘ব্লিচ’ করে সাদা হতে চান। যখন আমরা ক্যানসার-কিডনি-হার্টের সমস্যার জর্জরিত, কীটনাশকের ঠেলায় যখন আমার শরীর বিধ্বস্ত, যখন প্রতি দশ হাজার মানুষ পিছু যখন ভারতবর্ষে .০৪ হাসপাতাল শয্যা, তখন কিছু রূপান্তরকামী মানুষজন বিপুল খরচা করে Sex Reassignment Surgery (SRS) করাতে উদ্যত হন।

৪. বাউনের আউলবাউল-সঙ্গ এবং গাইঘাটা বেত্তান্ত

আমার সামান্য লেখাপত্তর ও ভিডিও যাঁরা দেখেছেন (এবং অবশ্যই আমার কাছের বন্ধুরা), তাঁরা নিশ্চিত জানেন আমি আউলবাউলদের সঙ্গ করি। তেমনি একবার বিশেষ এক আমন্ত্রণে গাইঘাটার মতুয়াদের সঙ্গে অনেক্ষণ কাটিয়েছিলুম। একটা ঠাণ্ডা লড়াই দেখেছিলুম ঠাকুর পরিবারের মতুয়া তিনু (মমতাবালা ঠাকুর-পরিবার) আর মতুয়া চাড্ডিদের (শান্তনু ঠাকুর পরিবার) মধ্যে। লড়াইটা গরম হতে বেশি সময় নেয় নি। তাঁদের অবশ্য মেহমানের আদরআপ্যায়নে যদিও কোনো ঘাটতি ছিলো না।

আচ্ছা, “ঠাকুর” পদবি তো প্রিন্স পরিবারেও ছিলো। প্রিন্সের ছেলে “মহর্ষি”, আর “মহর্ষি”র ছেলে “গুরুদেব”; সন্দীপন চাটুজ্জে মহাই এই জেনিওলজি ধরিয়ে দিয়েছেন। এবার ভাবুন তো, নিম্নবর্গীয় মতুয়া আর উচ্চবর্ণীয় ঠাকুর (বাঁড়ুজ্জে থেকে কুশারি হয়ে ঠাকুর) কেমন যেন ঠেকছে না?  

এ কারণেই কি কল্যাণী ঠাকুর স্বয়ং স্ব-আরোপে ঠাকুরের পাশে চাঁড়াল বসিয়ে গুরুচণ্ডালি “দোষ” (?) করে জানান দিয়ে যান তাঁর নিম্নবর্গীয় অস্তিত্ব? যদিচ বর্তমান লেখক গুরু আর চণ্ডালের selectional restriction আদৌ মানেন না।

৫. এবার আদত কথা: সাহিত্য অকাদেমি কুচ্ছো

এবারের সাহিত্য অকাদেমির বাংলা বিভাগের জুরি ছিলেন যাঁরা:
১। ব্রাত্য বসু (উৎপল দত্তের “মানুষের অধিকারে” আর “২১শে জুলাই” এবং আরেকটি মন্তব্য: আমি শিশির-শম্ভু-উৎপল-বাদল-অজিতেশ “যুগ” দেখি নাই, তথাপি “ব্রাত্য”যুগ দেখিয়া যৎপরোনাস্তি আহ্লাদিত!)
২। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (হে রা: স্বা: অনুগামী, আপনার লিখন শ্রদ্ধেয়, তবে কেন এই অশুভ আঁতাত?)
৩। প্রচেত গুপ্ত
৪। আবুল বাসার
৫। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়
৬। বিভাস রায়চৌধুরী
৭। উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়
৮। কল্যাণী ঠাকুর চাঁড়াল (মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত এই মানুষটিকে নিয়েই সমস্যা পেকেছে। তাই আগেই আমার জাতধম্মো নিয়ে গৌরচন্দ্রিকা সেরে ফেলেছি)
৯। মৌমিতা মাইতি
১০। অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই লইয়া ফেব্যুতে সম্প্রতি শ্রী অধ্যাপক মুখুজ্জে (অতি সুভদ্র মানুষ), অধ্যাপক Radical socialist চাটুজ্জে, চক্কোতিমহাই আর শ্রীহীন বাঁড়ুজ্জের মধ্যে একটা ঠাণ্ডা যুদ্ধু লেগে গেলো। এ নাটকের চরিত্র “উচ্চবর্ণীয়” চার আর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু: কল্যাণী ঠাকুর চাঁড়াল।
অধ্যাপক মুখুজ্জে কবুল করেন যে তিনি উপর্যুক্ত লিস্টির শেষ তিনজনকে চেনেন না। আরেক চক্কোত্তি মহাই শেষ চারজনকে চেনেন না বলে আরেক Radical Socialist অধ্যাপক চাটুজ্জে রেগে গিয়েও না রেগে এই চক্কোত্তি মশাইকে “অশ্বেতর জীব” (অশ্ব+ইতর মানে ‘খচ্চর’; চাটুজ্জে বাউন তো, তাই খচ্চর বলতে তাঁর দ্বিধা হয় এবং সংস্কৃত শব্দের আশ্রয় নিয়ে ফেলেন! ফেব্যুর সেন্সরশিপ আটকাতে তিনি তো শব্দটাকে “খ চ্চ র”/”খ*চ্চ*র এইভাবেও লিখতে পারতেন) আখ্যা দেন। এই তো মজা! এটা কি politically incorrect কথা হলনা?
র‍্যাডিকাল চাটুজ্জে মহাই মতুয়া কল্যাণী ঠাকুর চাঁড়ালকে লইয়া, বিশেষত তাঁর জাতপাতগত অবস্থান নিয়ে যৎপরোনাস্তি বিচলিত ও উদ্বিগ্ন। তাঁর প্রশ্ন: কেন এত্তো লোকজন এনাকে চেনেন না?
আর আমার কথা ছাড়ুন, আমি তো কম পড়ে লিটারেট (মানে Comparative literature! এমন নাম যাবির ক্যাম্পাসেই চলে)। আমার বিশ্বসাহিত্য পড়ার দৌড় দেব সাহিত্য কুটীর আর মৌসুমী প্রকাশনী। তাই আমার অজ্ঞতা ও মূর্খতা আছেই। কিন্তু, ignorance is not an excuse। 
তাই তো আমি উচ্চবর্ণের বিজয় তেণ্ডুলকরের “কন্যাদান”-কে বা মাণিক বাঁড়ুজ্জের “পদ্মানদীর মাঝি”-কে দলিত সাহিত্য বলেই গণ্য করি, যদিচ author-এর author-ity-র ইন্তেকাল হয়েছে। কবিরে যেমন পাইনা কবির জীবনচরিতে, বয়ান পড়ার সময় ethnocentric হতেই হবে কি?

আবার এই অধ্যাপক র‍্যাডিকাল চাটুজ্জে মশাই হুলিয়া জারি করেন যে পাঠক্রমে নীৎসে এবং হাইদেগারকে পড়ানোর ক্ষেত্রে এই দু’জনের তথাকথিত “ফ্যাসিবাদী” প্রবণতা সম্পর্কে সক্কলের সচেতন থাকা উচিৎ। এখানে কি Vulgar Marxism-এর (a la Godelier and Monod; মার্ক্সের একাধিক ভূত, অর্থাৎ SpectreS of Marx-এর মধ্যে এই ভূতটি অন্যতম) চক্করে এই দুই মড়া অথরের non-disposable জবানির স্ব-/সপক্ষে বিপক্ষ অবিনির্মাণ উবে যায় না? এই র‍্যাডিকাল চাটুজ্জের মতে হিংস্র বডিলাইন বোলিং-এর জন্য লারউডকে কিছু বলা যাবেনা, কেননা তিনি নাকি “শ্রমিকের সন্তান”! এও কি মৌলবাদ নয়?

এখানে মোদ্দা কথাটা কিন্তু খুব পরিষ্কার। একজন “দলিত মানবীবাদী” কবি কি একটা আদ্যন্ত দলিত-বিরোধী, মানবীবাদ-বিরোধী (এবং একইসঙ্গে বিরোধী স্বরেদের গিলে খাওয়া, ভানের মাধ্যমে নিজের মধ্যে পুরে ফেলা) রাষ্ট্রের একটি অকাদেমির সদস্য এমনি এমনি হতে পারেন? এখানে কি বিশেষ পার্টির প্রতি আনুগত্য বা patron-client সম্পক্কো বজায় থাকে না? ফুকোর বলা বহুমাত্রিক খ্যামতাতন্ত্রের subsumed (raréfaction) অংশ না হলে এমত সদস্যপদ আদৌ বজায় থাকে কি?

৬. পুরস্কার-তিরস্কার কলঙ্ক কণ্ঠের হার…

স্পিনোজা হাইডেল্বার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পোফেসর হইবার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করিলেন।

ন্যাংটো দিওজিনিস আলেকজান্ডারকে কহিলেন, ছায়া পড়িতেছে, সরিয়া দাঁড়াও।

সার্ত নোবেল পুরস্কার না নিয়ে অসম্ভব এক পত্র-আঘাত করিলেন।

সার্তের সেই ঝাঁঝালো পত্র পড়িতে বসিয়া মনে হইল আমার ন্যায় বাতিল বাতুলের কাছে আঙুরফল টক।

আমার প্রিয় আরো দুই শিক্ষককে যখন (জ-)ঘেন্না পার্টি=রাষ্ট্রের (এখন সরকার, রাষ্ট্র, প্রপার নেমওলা পার্টি— সব কিছুকে গুলিয়ে-মুলিয়ে একাকার করে দেওয়া হয়েছে) হাত থেকে বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরষ্কার এবং বিদ্যাসাগর-দিনময়ী স্মৃতি পুরষ্কার নিতে দেখি, তখন বিবমিষা জাগে।

মনে কি পড়ে বুনো রামনাথের বা বিষ্ণুশর্মার কথা? ভুলিয়া গেছি।

এই সময়েই আমি আমার শিক্ষক প্রয়াত শিশির কুমার দাশের পুরষ্কারের প্রহসন নিয়ে লেখা নাটকটি পড়তে বসি।

দ্রঃ

“প্রতীচ্যের বেগানারা: এক হিপক্রিটের নজরে”⤡

DEBAPRASAD BANDYOPADHYAY — AN OPEN LETTER FROM ONE PROFESSOR TO ANOTHER PROFESSOR (একটি খোলা চিঠি — نامه سرگشاده)⤡

৭. স্মৃতি, সংস্কার বা trace লইয়া Stress

আমি পারিনি, পারিনি জাতপাতের সংস্কার ভুলে যেতে…
টিভি টক শোতে গামছা কাঁধে রেজ্জাক মোল্লা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেন: আমি পরাশরের সন্তান।
ভারতসভাহলে বক্তিমে দিতে গেছি। কাঁধে গামছা মনোরঞ্জন ব্যাপারি আমাকে জড়িয়ে ধরে বই-এর পুশ সেল করে নিলেন। তারপর তাঁকে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে কিছু অযাচিত প্রশ্ন করায় মিত্রভেদ হয়ে যায়। তিনি আমাকে ফেবুতে ব্লক করে দেন। সংলাপ থেমে যায়।
বাবাসাহেব তো ১০ বছরের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু রাখতে বলেছিলেন।
তারপর অমৃতমমহোৎসবকালেও ঠ্যালা মারছে জাতপাত।

এটা কী ভোটের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত? নাকি Overdetermined? 

আমাদের তো হওয়ার কথা ছিলো জাতপাতহীন মানবগোত্রীয় (species being; a la Marx!)। এট্টু strategic essentialism করে ফেললুম, কেননা আজকের হিঁদুত্ববাদী রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে এই  strategic essentialism অত্যন্ত জরুরি বলে ঠেকে, কারণ আমাদের সময় এসেছে জাত-পাতের সংস্কার ঝেড়ে ফেলার। কোটা ব্যবস্থা কি শেষমেশ জাতপাতের “স্মৃতি”কে টিঁকিয়ে রাখেনি?

এই কাজিয়ায় যে চাবিশব্দগুলি এসে যাচ্ছে, সেগুলি হলোঃ

রাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তথা লয়্যালটি;

ক্রিটিকাল না হয়ে জাজমেন্টাল হওয়া;

পদবী-ফেটিশ;

Patron-Client Relationship;

Homo Hierarchicus (Dumont);

Caste Census।

এই সময়েই আমার এক ছ্যাবলা বন্ধু এসে বলে: “এবার থেকে ট্র্যাপিজ খেলা, ক্রিকেট-ফুটবল ইত্যাদিতেও কোটা সিস্টেম চালু হোক।”

আমার শরীর দেখি শুয়ে আছে হাসপাতালের বেডে। এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত এক উচ্চবর্ণের ডাক্তার আসছেন আমার শরীর খুঁড়বেন বলে। তাঁর বাপের বহুৎ পয়হা না থাকলে তিনি ডাক্তার হতেই পারতেন না। আমি ভয়ার্ত, শঙ্কিত।

এবার আমার শ্মশানবৈরাগ্য জাগলো।

আমার বাড়ির অনতিদূরেই কাশিপুর শ্রীরামকৃষ্ণ মহাশ্মশান। পদব্রজে গেলুম।

চাঁড়ালদের জন্য পাক্কা সরকারি বেতন ব্যবস্থা এবং অবসরোত্তর সুরক্ষা। তবু তাঁরা মড়া পোড়ানোর পর ছাই-এর গাদা থেকে কিছু একটা তুলে পয়হা পাওয়ার জন্য হাত পেতে দাঁড়ান। তাঁদের কন্যার বিয়ের জন্য আমাদের বাড়িতে ভিক্ষে নিতে আসেন।   

বাউন পুরুতদের জন্য লবডঙ্কা। অবশ্যি সম্প্রতি ববি হাকিম মহোদয় পুরুতভাতা চালু করেছেন। ওঁ তুষ্টি, ওঁ তুষ্টি, ওঁ তুষ্টি…

অথচ রাতদূপুরে সিগারেট ফুরিয়ে গেলে যখন শ্মশানে যাই, তখন সিনিক নেড়িকুত্তাদের দাঁত থেকে বাঁচানোর জন্য এই চাঁড়ালরাই আমাকে বাড়ি নিরাপদে পৌঁছে দেন।  

বড্ড চাপ লাগছে… টেন্সিত হয়ে উঠছি। বাড়াবাড়িরকমের “অতি সঠিক রাজনৈতিক” হওয়ার একপেশে ব্যামো (সুসান সোন্ট্যাগকে মনে রেখেই বলছি) কী আমাদেরকে অনেকান্ত তত্ত্বদের সম্ভাবনাদের চৌকাঠগুলোকে বুঝে নেওয়ার ক্ষেত্রে অতর্কিত বাধা তৈরি করছে না?

৮. কার্ডগেমস্

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই এক তাস খেলার আসরে। তাদের কারোর হাতে ভিক্টিম কার্ড, কারোর হাতে গোদা ফেমিনিস্ট কার্ড, কারোর হাতে ভালগার মার্ক্সিস্ট কার্ড, আবার কারোর হাতে ধম্মো-জাত-পাতের কার্ড।

খ্যামতার নিরন্তর খেলা চলছে, চলবে।  

আরো দেখুনঃ

DEVIL’S ADVOCACY: SABOTAGING HINDUTVA VIEW HERE ⤡

“তোমাদের পৈতেতে আমার খোলা চিঠি” এখানে দেখুন

My Open Letter to You on Your ‘Sacred Thread Ceremony’ VIEW HERE ⤡

Leave a Comment